রিভিউ নাম্বারঃ ২৯
বই- কবি
লেখক- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃষ্ঠা- ১৬৭
মুদ্রিত মূল্য- ২২০ টাকা
প্রকাশনী- বইবাজার প্রকাশনী
প্রকাশকাল- নভেম্বর ২০১৭
প্রচ্ছদ- মাহফুজ আলম
#লেখক_পরিচিতিঃ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয় ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই ২৪ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মায়ের নাম হ রিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রভাবতী দেবী। তাদের বাড়িতে নিয়মিত কালী ও তারা মায়ের পুজো হতো। তার বাবা মা দুজনেই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আদর্শনিষ্ঠ।
তাঁর লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তাঁর সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ।
#পাঠ_সংক্ষেপঃ
নিতাই চরণ নিচু বংশের ছেলে। নিতাইচরণের পারিবারিক পেশা ছিল ডাকাতি কিন্তু সে একদম অন্যরকম। সে পড়াশুনা করতেন। কারো কথাতেই তার পারিবারিক পেশাতে সে আসেননি। একসময় নিতাইচরণ গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়ে কবি হয়ে ওঠে। সেসময় সে কবিয়ালদের দোহার হিসেবে কাজ করছিলো। বাবুরা অবাক হয়ে বললেন- ‘ডোমের ছেলে পোয়েট!
একসময় নিতাই ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। সেখানে এক ভক্ত বন্ধু জুটে যায়। নাম রাজা। রাজার স্ত্রীর বোন ‘ঠাকুরঝি’। সে দুধ বিক্রি করে। দেখতে ময়লা বলে সকলেই তাকে কথা শুনায়। ঠাকুরঝির প্রতি নিতাইয়ের মায়া হয়। একসময় তার প্রতি টান এবং গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয়। কিন্তু বিষয়টি অসম্ভব। ঠাকুরঝি ছিল বিবাহিত। একসময় বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়।
তারপর নিতাই অন্য জায়গায় চলে যায়। সেখানে আশ্রয় মিলে এক দলের সাথে। সে দল অশ্লীল গান-বাজনা করে তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সেই দলে থাকা অবস্থায় নিতাই এর সাথে পরিচয় হয় বসন’র সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝিকে দেখতে পায়। তাদের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে যায়।
নিতাই কি তাহলে ভুলে যায় ঠাকুরঝি কে? বসন আর নিতাইয়ের মাঝে পরবর্তীতে কী হয়? পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
#পছন্দের_লাইনঃ
★কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
★সংসারে সুখ ভালোবাসায়, মিষ্টি কথায়।
★তারে ভুলিব কেমনে, প্রাণ সঁপিয়াছি যারে আপন জেনে।
★সংসারে যে সহ্য করে সেই মহাশয়, ক্ষমার সমান ধর্ম কোনো ধর্ম নয়।
#পাঠ_অনুভূতিঃ
লেখক একজন নিচু জাতের লোকের কবিয়াল হিসেবে গড়ে উঠার গল্প অনেক দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিচু জাত হওয়ায় তার জীবনে কত বাঁধা আসতে পরে এবং কত ধরনের মানুষের সঙ্গ লাভ করতে পারে সবই সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন। কবি উপন্যাসের মধ্যে লেখক আছেন অনেক গভীর স্নায়ুকোষে। এই কবি তারাশঙ্করের আমি অথচ আমি নয়, আবার আমি থেকে ভিন্ন নয়। লেখক একই সঙ্গে এর নায়ককে নিজের থেকে স্বতন্ত্র করে দেখেছেন এবং নিজেকে তার মধ্যে অনুভব করেছেন।
এই উপন্যাসে ঠাকুরঝি এবং বসন মূলত দুটি পৃথক পটভূমি। বসন মূলত ঝুমুর দলের আর সংশ্লিষ্ট পতিতাপল্লীর ফল। আর ঠাকুরঝির সঙ্গে নিতাইয়ের অতটা ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়নি তবে, স্থানের সঙ্গে মানুষের যেমন মামুলি যোগ থাকে তার চেয়ে অল্প বেশি। দুই নারী এবং তাদের পটভূমিতে বিপরীত জীবন। ঠাকুরঝি অনেকটাই নিতাইয়ের রচনা কিন্তু বসন তা ছিলো না।
বইটির অনেক প্রসংশা শুনেছিলাম। পড়ার লিস্টে ছিলো। তাই আগ্রহ নিয়ে পড়ে ফেলি। যতটা আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছিলাম তার থেকেও অনেক ভালো লেগেছে বইটা।
উল্লেখ্যঃ ২০২০ বইমেলায় বায়ান্ন প্রকাশনি কবি বইটি নতুন ভাবে প্রকাশ করেন। বইটির মুল্য ১৫২৳
রিভিউয়েঃ Nazmul Islam Shohan (হিমু)